বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৪:১৭ পূর্বাহ্ন

শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত উত্তর জনপদ

শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত উত্তর জনপদ

স্বদেশ ডেস্ক: হাড় কাঁপানো শীতের মাস ‘মাঘ’। যে শীত তীব্র শক্তির বাঘকেও হার মানায়। মাঘের মাঝামাঝি সময়ে এসে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে দেশের উত্তর-পশ্চিম জনপদে। গতকাল রবিবার কুড়িগ্রামের রাজারহাটে থার্মোমিটারের পারদ নামে ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। চলতি শীত মৌসুমে এটিই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এ যেন বিদায়ের আগে প্রকৃতিকে কাঁপিয়ে দেওয়া। এ দিকে হুল ফুটানো এই কনকনে ঠান্ডায় ধানের বীজতলায় কাজ করতে গিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন রাজারহাটের দিনমজুর মো. আজাদ আলী (৪৩)।

সাধারণত বড় এলাকাজুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে ১০ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে চলে এলে মৃদু; ৮ থেকে ৬ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং এর নিচে নামলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলে ধরা হয়। গতকাল রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গা ও ঈশ্বরদীতে ৬ দশমিক ২, বদলগাছি ও সৈয়দপুরে ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি এবং বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, তেঁতুলিয়া, ডিমলা, যশোর ও শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা ছিল ৭ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। আর ঢাকায় পারদ নেমেছিল ১১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

এ প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানান, কুড়িগ্রাম ও রাজশাহী অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। আর মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বিভিন্ন এলাকা এবং টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নিকলী, শ্রীমঙ্গল, খুলনা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, বরিশাল ও ভোলা অঞ্চলের ওপর দিয়ে। চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের তাপমাত্রাও সোমবার সামান্য কমতে পারে।

আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান আরও জানান, আগামী দুইদিন কোনো কোনো এলাকায় আরও দুই থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমতে পারে। এতে শৈত্যপ্রবাহের এলাকা আরও কিছুটা বিস্তার ঘটবে। এ অবস্থা থাকতে পারে আগামী দুদিন। তবে সপ্তাহ শেষে কিছুটা স্বস্তি মিলতে পারে। তবে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেও শীতের অনুভূতি একটু বেশি থাকবে। এরপর ধীরে ধীরে বাড়বে তাপমাত্রা।

বাংলাদেশে শীতের দাপট চলে মূলত জানুয়ারিজুড়ে। এবারও বিদায়ের আগে কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে শীত। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ও মধ্য জানুয়ারিতে দুই দফা মৃদু শৈত্যপ্রবাহের পর শেষে এসে তৃতীয় দফা শৈত্যপ্রবাহ বইছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গতকাল দেশের ২২ জেলার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামে। আর ১০ ডিগ্রি ছিল চার এবং ১১ ডিগ্রির মধ্যে ছিল ছয় জেলার তাপমাত্রা। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশা বিরাজ করতে পারে।

রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) : উত্তর জনপদের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শৈত্যপ্রবাহ আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে কুড়িগ্রামে। গত ২৪ ঘণ্টায় হুল ফোটানো কনকনে ঠান্ডা আর

উত্তরের হিমশীতল হাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত। ঘরের বাহিরে থাকতেই পারছে না এই এলাকার লোকজন। কার্যত হিমঘরে পরিণত হয়েছে এই জনপদ। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় রাজারহাটে, ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ দিকে তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে বীজতলায় ধানের চারা তুলতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন মো. আজাদ আলী নামের এক দিনমজুর। তিনি রাজারহাট ইউনিয়নের কেন্দ্রা গ্রামের মৃত জহুর উদ্দিনের ছেলে।

দিনাজপুর : হিমালয়ের কোলঘেঁষে দেশের উত্তর জনপদে বৃহত্তর দিনাজপুরে বইছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। এতে খেটে খাওয়া মানুষের বিশেষ করে দিনমজুরদের দুর্ভোগ বেড়েছে। গতকাল জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে বাতাসের আর্দ্রতার হার ছিল ৯৮ ভাগ। আগামী দুই-তিনদিনও শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তোফাজ্জল হোসেন।

তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) : তিনদিন ধরে হাড়কাঁপানো বরফ শীতে কাঁপছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার প্রান্তিক মানুষ। গতকাল সকালে এ অঞ্চলে রেকর্ড করা হয় ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। তবে আবহাওয়া অফিসের নথিপত্রের তাপমাত্রার রেকর্ড মানতে চাচ্ছেন না এ অঞ্চলের মানুষ। তারা মনে করছেন, রেকর্ডের তুলনায় বেশি শীত অনুভূতি হচ্ছে। দিনের চেয়ে রাতে বইছে বরফগলা ঠান্ডা। তখন হাত-পা ও শরীর অবশ হয়ে আসার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়।

রাজশাহী : তীব্র শৈত্যপ্রবাহে রাজশাহীর জনজীবন একেবারেই বিপর্যস্ত। গতকাল সকাল ৬টার পর এ অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রাজশাহীতে। তীব্র এই শীত ৫ ফ্রেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক দেবল কুমার মৈত্র।

নীলফামারী : তিনদিন ধরে নীলফামারীতে তীব্র শীতের সঙ্গে বইছে হিমেল বাতাস। আছে ঘন কুয়াশার হানা। দুপুর পর্যন্ত বাড়িতে খড়কুটে জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা। রক্ষা পাচ্ছে না প্রাণীকুলও। বেড়েছে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব। যদিও স্থানীয় আবহাওয়া অফিস বলছে, গতকাল নীলফামারীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বগুড়া : শীতের প্রকোপ বেড়েই চলেছে বগুড়ায়। গতকাল এই জনপদে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এই মৌসুমের সর্বনিম্ন। এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর বগুড়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বগুড়া আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ সজিব হোসেন বলেন, ভোর থেকেই জেলাজুড়ে ঘন কুয়াশা পড়ছে। বইছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহও। এমন আবহাওয়া আরও কয়েকদিন থাকতে পারে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877